বিডিআর বিদ্রোহ–সংক্রান্ত বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নতুন করে আরও ৩৫ জন বন্দী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিভিন্ন পর্যায়ের যাচাই–বাছাই শেষে তাঁদের কারাগার থেকে ছাড়া হয়। মুক্তির মুহূর্তে কারা ফটকে স্বজনদের উপস্থিতি কারাগার এলাকা সরব করে তোলে।

তিন কারাগার ইউনিট থেকে ধাপে ধাপে মুক্তি
মুক্তিপ্রাপ্ত ৩৫ জনের মধ্যে—
- কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ১ জন,
- কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ থেকে ২ জন,
- আর পার্ট-২ থেকে সবচেয়ে বেশি ৩২ জন বন্দী মুক্তি পান।
কারা সূত্র জানায়, সোমবার দুপুরের পরপরই জামিন সংক্রান্ত কাগজপত্র কারাগারগুলোতে পৌঁছায়। নথিপত্র যাচাই ও আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষ করার পর সন্ধ্যায় তাঁদের আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়।
এখন পর্যন্ত মোট ২৫৩ জন জামিনে মুক্ত
বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া মামলায় এর আগে বিভিন্ন সময়ে ২১৮ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছিল। নতুন করে আরও ৩৫ জন মুক্তি পাওয়ায় মোট জামিনপ্রাপ্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২৫৩ জনে।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ আল মামুন জানান, সকালে এক সাবেক বিডিআর সদস্যের জামিনের কাগজ আসে। নথি যাচাই–বাছাই করে সন্ধ্যায় তাঁর মুক্তির আদেশ কার্যকর করা হয়। পার্ট–২ কারাগারের জেল সুপার মো. আল মামুন জানান, সকালে ৩২ জনের জামিনের নথি হাতে পাওয়ার পর বিকেলেই মুক্তি দেওয়া হয়। একইভাবে পার্ট–১ কারাগার থেকেও ২ জনকে জামিনে ছাড়া হয়।
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ: সাম্প্রতিক ইতিহাসের শোকাবহ অধ্যায়
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ভয়াবহ বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এই অভ্যুত্থানে বিলুপ্ত বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। মোট ৭৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিদ্রোহের পরদিন এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি দুটি পৃথক মামলা দায়ের হয়—একটি হত্যা মামলা এবং আরেকটি বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে।
দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা
বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় মোট ৮৫০ জনকে আসামি করা হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত এ মামলায় দেওয়া রায়ে—
- ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড,
- ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড,
- ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড,
এবং ২৭৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলাটি এখনো চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

