কড়াইল বস্তি ঢাকার এক বিশাল এবং অত্যন্ত ঘনবসতি-বিস্তারপ্রাপ্ত অবৈধ বসতি; প্রায় অনেক হাজার পরিবার এখানে বাস করে। সম্প্রতি, ২৫ নভেম্বর ২০২৫-এ এই এলাকায় ভয়ানক একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে — প্রায় ১,৫০০টি ঘর পুড়ে গেছে, বাসিন্দারা ছুটে পালায় এবং দমকল বাহিনী প্রায় পাঁচ ঘণ্টা লড়াই চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নেভাতে দমকল বাহিনীর জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ছিল। কড়াইল বস্তির সরু গলি এবং ঘনভূমি কারণে ফায়ার ইঞ্জিন সরাসরি পৌঁছাতে পারেনি, ফলে লম্বা হোস পাইপ দিয়ে দূর থেকে পানি প্রবাহ করতে হয়েছে। এছাড়া যাদের বাড়ি ছিল টিন, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি — তারা দ্রুত দাহ্য হয়ে ওঠে, এবং আশপাশের বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

এই ধরনের আগুন কেবল একবারের ঘটনা নয়; অতীতে কড়াইল বস্তিতে বারবার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। অনেক বাসিন্দা বিশ্বাস করেন এগুলো শুধুমাত্র দুর্ঘটনা নয় — তাদের দাবি, কিছু আগুন ইচ্ছাকৃতভাবে লাগানো হয়, যেন তারা তাদের বসত ছাড়তে বাধ্য হয়। বিশেষ করে ২০১৬-র আগুনের সময়, অনেক বাসিন্দা বলেছিলেন এটি একটি ষড়যন্ত্র, কারণ ওই জমিতে সরকারের পরিকল্পনা ছিল একটি আইসিটি পার্ক গড়ে তোলার। তবে দমকল বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ প্রায়ই সম্পূর্ণ প্রমাণসাপেক্ষ রিপোর্ট না দিয়ে উড়িয়ে দেয়।
সরকারি তদন্ত ও মিডিয়া রিপোর্ট এখনও স্পষ্টভাবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি যে প্রতিবার আগুন ইচ্ছাকৃত কি না। ২০২৫-এর সর্বশেষ অগ্নিকাণ্ডেও দমকল জানায় “কারণ এখনও নির্ধারিত হয়নি”। অন্যদিকে, বাসিন্দাদের দাবি এবং পূর্বের অভিজ্ঞতা এ কথা বলার সুযোগ তৈরি করে যে — তাদের ধারণা “এক-দু’টি আগুন ঘটনা পরিকল্পিত ধ্বংসের অংশ” হতে পারে।
কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগা একটি দীর্ঘকালীন এবং পুনরাবৃত্ত সমস্যা, যার পেছনে মৌলিক কারণ হতে পারে দুর্ঘটনা, কিন্তু অনেক সময় বাসিন্দারা সুচিন্তিত ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাও উল্লেখ করেন। এখনো কোনও একক তদন্ত রিপোর্ট পুরোপুরি প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্যভাবে গৃহীত হয়নি — ফলে “নিশ্চিতভাবে ইচ্ছাকৃত” বা “শুধু দুর্ঘটনা” — কোন দিকটি পুরোপুরি সত্যি, তা স্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না।

