খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণা: এসএসএফ নিরাপত্তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নতুন অধ্যায়

Date:

Share post:

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে ২০২৫ সালের ১ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন Begum Khaleda Zia–কে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বা VVIP ঘোষণা করেছে সরকার, যার ফলে তিনি সরাসরি Special Security Force (SSF)–এর নিরাপত্তা সুবিধা পাবেন। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জারি হওয়া এই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “Special Security Force Act, 2021”-এর ধারা ২(ক) অনুযায়ী তাঁকে VVIP তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। বহু বছর পর আবার কোনো রাজনৈতিক নেতাকে নতুনভাবে VVIP মর্যাদা দেওয়ায় রাজনৈতিক মহলে এটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ২০০৮ সালের পর এই প্রথম এমন উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তির জন্য নেওয়া হলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ শুধু আনুষ্ঠানিক মর্যাদা নয়—এটি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত একটি কাঠামোবদ্ধ নিরাপত্তা সুবিধা, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতি ও নিরাপত্তা বিবেচনার ওপর নির্ভর করে।

বর্তমানে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন, এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা, বয়সজনিত জটিলতা, রাজনৈতিক পরিচিতি ও হাসপাতালে ব্যাপক জনসমাগমের কারণে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে হাসপাতাল এলাকা, প্রবেশপথ ও সংশ্লিষ্ট করিডোরে এসএসএফ সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। এসএসএফ সাধারণত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা বিদেশি শীর্ষ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেও, আইন অনুযায়ী প্রয়োজনে সরকার কাউকে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় আনতে পারে। ফলে, খালেদা জিয়ার পাশাপাশি তার পরিবার—বিশেষ করে নিকটাত্মীয়রা—ও এই নিরাপত্তা সুবিধার আওতায় পড়তে পারেন। নিরাপত্তা জোরদার করার অংশ হিসেবে হাসপাতালের আশপাশের রাস্তা, পার্কিং এলাকা এবং ভিজিটর ম্যানেজমেন্টেও কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে।

VVIP ঘোষণার ফলে তিনি যেসব সুবিধা পাচ্ছেন, তার মধ্যে আছে নিকট দূরত্বে অস্ত্রধারী নিরাপত্তা টিম, চলাচলে নিরাপত্তা প্রটোকল, হাসপাতালে বা বাসস্থানে বিশেষ নিরাপত্তাবেষ্টনী, প্রয়োজনে নিরাপত্তা স্ক্যানিং ও নিয়ন্ত্রিত প্রবেশ ব্যবস্থা। এসএসএফ আইন বলছে, রাষ্ট্র কেবল ব্যক্তি নয়, প্রয়োজনে তার পরিবারকেও এই নিরাপত্তার আওতায় আনতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকা, এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ—সবকিছুর প্রেক্ষাপটেই এ সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারও জানাচ্ছে, নিরাপত্তার এই ব্যবস্থা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে বিশেষভাবে প্রয়োজন হয়েছে।

খালেদা জিয়াকে VVIP ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত একটি বড় প্রশাসনিক পদক্ষেপ, যা কেবল একজন রাজনৈতিক নেত্রীর নিরাপত্তা নয়—বরং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অবস্থারও প্রতিচ্ছবি। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতদিন চলবে, বা তাঁর অবস্থার উন্নতির পর তা সমন্বয় করা হবে কি না—এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে এসএসএফ–এর সক্রিয় নিরাপত্তা কার্যক্রম দেখে বোঝা যায় যে, আপাতত খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করছে সরকার।

Related articles

ইসরায়েলকে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস

ইহুদিবাদী ইসরায়েলের জমা দেওয়া রেকর্ড নিবন্ধনের আবেদন আর গ্রহণ বা মূল্যায়ন না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস...

ওষুধ ছাড়াই ১৮ মাস সুস্থ—এইডস চিকিৎসায় যুগান্তকারী সাফল্য

এইডস একবার হলে এখনো পর্যন্ত এমন কোনো চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি যা রোগটিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারে। তবুও সাম্প্রতিক...

আইসক্রিম কিনতে গিয়ে নিখোঁজ—১৭ বছর পর বাড়ি ফিরল পাকিস্তানের কিরণ

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের একটি ভিজে রাস্তায় শুরু হয়েছিল এই বেদনাদায়ক গল্পের যাত্রা। বয়স তখন মাত্র ১০—এক বর্ষণমুখর দুপুরে...

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের চিঠি

বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শাহবাজ শরিফ তাঁর প্রতি...