এশিয়ার দুই প্রভাবশালী শক্তি—ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের বাঁধন যেন আরও মজবুত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্ক নীতির প্রেক্ষাপটে বেইজিংয়ের দিকে কিছুটা ঝুঁকছে দিল্লি—এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে উভয় দেশের নেতারা একাধিক যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি এশিয়ায় নতুন এক বাণিজ্যিক জোটের জন্ম হতে চলেছে?
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েনের সূচনা
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে দেখা হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির। উষ্ণ অভ্যর্থনা ও পারস্পরিক প্রশংসায় ভরপুর সেই সাক্ষাতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার আশ্বাস দেন দুই নেতা। ট্রাম্প মোদিকে ‘পরম মিত্র’ আখ্যাও দেন।
তবে কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই সম্পর্কের রসায়নে আসে নাটকীয় পরিবর্তন। রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর আরোপ করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি শুল্ক। হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
চীন-ভারত বৈরিতা থেকে বোঝাপড়ার পথে?
এমন এক পরিস্থিতিতে, দীর্ঘদিনের বৈরী প্রতিবেশী চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের ইঙ্গিত মিলছে। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই দিল্লি সফর করেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। এ সফরে দুই দেশ সরাসরি বিমান চলাচল, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং সীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি যৌথ উদ্যোগ গ্রহণে সম্মত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রবিমুখ এশিয়া: নতুন জোটের সম্ভাবনা
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘনিষ্ঠতা কেবল তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক চাপে নয়, বরং একটি বৃহত্তর কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। ভারত-চীন সম্পর্ক বিশ্লেষক ইভান লিদারেভ বলেন, “চীন বুঝতে পেরেছে, অতীতে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। এই বাস্তবতায়, ভারত ও চীন মিলে ওয়াশিংটনের প্রভাবমুক্ত একটি বাণিজ্যিক বলয়ের ভিত্তি তৈরি করতে পারে।”
তাইওয়ান-এশিয়া এক্সচেঞ্জ ফাউন্ডেশনের ফেলো সানা হাশমিও মনে করেন, “ভারত-চীন সম্পর্ক উন্নত হলে ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্কের চাপ কিছুটা কমবে। সেই সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর সুযোগও তৈরি হবে।” তাঁর মতে, চীন এমন একটি অবস্থান নিতে চায়, যেখানে তারা ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চলে একটি বিশ্বাসযোগ্য সামরিক ও অর্থনৈতিক বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে আসতে পারে।
পরিসংখ্যান যা বলছে
বর্তমানে চীন, যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। তবে দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ঘাটতির প্রায় দ্বিগুণ।
যদিও সীমান্ত সংঘর্ষ ও আস্থাহীনতা দুই দেশের সম্পর্কে এখনও বড় বাধা, তবুও সাম্প্রতিক কূটনৈতিক প্রয়াস ও বাণিজ্যিক উদ্যোগগুলো ভারত ও চীনের মধ্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটাতে পারে। বিশ্বরাজনীতির পালাবদলে, এশিয়াতেই কি গড়ে উঠছে একটি বিকল্প শক্তির বলয়? উত্তর সময়ই দেবে।

