নির্বাচন বয়কটের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেননা: প্রধানমন্ত্রী
- রাজনীতি নির্বাচন
- ২৪ ফেব্রয়ারি ২০১৯ - ৬ বছর আগে
- পড়া হয়েছে - ৪৫৬৬৬
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ প্রার্থীদের নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে অবস্থান করার আহবান জানিয়ে বলেছেন, যদি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি নির্বাচন বয়কটের ঘোষণাও দেয় তবুও আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না।
তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি বিএনপি-জামাতের একটি চরিত্রই রয়েছে নির্বাচনের মাঝপথেই তারা ঘোষণা দিতে পারে নির্বাচনে আমরা অংশ নিব না এবং আমরা নির্বাচন বয়কট করলাম। সেক্ষেত্রে আমি আমাদের প্রার্থী এবং অন্যদলের যারা রয়েছেন তাদেরকে বলবো নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট চালিয়ে যেতে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) দিনাজপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মাহবুবুর রহমাকে দেখতে গিয়ে একথা বলেন। ডা. মাহাবুব বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসি হামলায় গুরুতর আহতাবস্থায় সিএমএইচ-এ চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শেখ হাসিনা সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি বলতে চাই, বিএনপি নির্বাচনের মাঝামাঝি সময়েই হয়তো বলে বসবে আমরা নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো না, এটা বিশ্বাস করবেন না। এটা তাদের আরেকটি গেম।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি এসময় দলের প্রতিনিধি এবং নির্বাচনী এজেন্টদের প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত অবস্থান করারও আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী, মহাজোটের প্রার্থী এবং এজেন্টবৃন্দ রয়েছেন তাদেরকে আমি বলতে চাই নির্বাচনের শেষ অবদি আপনারা ভোট কেন্দ্রে থাকবেন এবং রিটার্নিং অফিসার এবং প্রিসাইডিং অফিসারদের স্বাক্ষর করা ভোটের ফলাফল নিয়ে তবেই বাড়িতে ফিরবেন।’ আগামীকালের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
‘যদি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করতে পারি, আমি আপনাদের এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি স্থানীয় এবং বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা এ সময় জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ায় তাঁর দৃঢ় আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘কাজেই আমরা চাইব নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হোক।’
তিনি বলেন, "আমার বিশ্বাস জনগণ আমাদের ভোট দিলে আমরা ক্ষমতায় থাকেবো, নচেৎ নয়,আমি এটা জনগণের ওপরই ছেড়ে দিলাম।" শেখ হাসিনা এ সময় ৬ জন আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা এবং ৪৫০ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে আহত করার কঠোর সমালোচনা করেন।
নির্বাচনের আগে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর গোপন হামলা চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "তারা একদিকে বিদেশে আমাদের নামে নালিশ করছে অন্যদিকে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করছে।"
তিনি দলের নেতা-কর্মীদের ধৈর্য্য ধারনের আহবান জানিয়ে বলেন, "আমরা ক্ষমতায় থাকলেও বিএনপি-জামায়াত আমাদের দলের অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে কিন্তু আমাদের দলের সবাইকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। কেননা আমরা জানি জনগণ আমাদেরকেই ভোট দেবে।"
দেশের জনগণ আগামীকাল একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, "কাজেই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে কেউ যেন নির্বাচনকে... প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে এবং আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের প্রার্থী এবং নেতা-কর্মীদের এ বিষয়ে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।"
নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই বলে বিএনপি’র অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, "তাদের লেভেল প্লেইং ফিল্ডের মানে হচ্ছে তাদেরকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে হবে।"
তিনি বলেন, "বিএনপি’র লেভেল প্লেইং ফিল্ড মানে এমন একটা অবস্থা তৈরি করতে হবে যাতে করে তারা বিজয়ী হতে পারে। তাহলেই কেবল মাত্র লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরী হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচনে জয়লাভের বিষয়ে তাদের কোন চিন্তা-ভাবনা নেই।"
এক একটি আসনে ৪/৫ জন করে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি তাদের নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,"তারা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে এবং নিলামের মাধ্যমে প্রার্থীদের মাঝে আসন বন্টন করেছে। যারাই বেশি বেশি টাকা দিতে পেরেছে তারাই কেবল প্রার্থী হতে পেরেছে।"
তিনি বলেন, "অনেক শক্তিশালী এবং পুরনো প্রার্থী, যাদের এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তারা বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পায়নি। যে কারণে তারা ক্ষুদ্ধ এবং তারা দলের অভ্যন্তরে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে।"
বিএনপি’র মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিরোধিতার কারণে যারা মনোনয়ন পেয়েছে তারা তাদের নির্বাচনী এলাকাতেই যেতে পারছে না উল্লেখ কওে শেখ হাসিনা বলেন, "তারাই সংঘাতে জড়াচ্ছে এবং নিজেদের কার্যালয় নিজেরাই আগুন দিয়ে আমাদের দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।"
উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো’ বিএনপি’র পুরনো অভ্যাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, "তারা এভাবেই জলঘোলা করার চেষ্টা করছে। তারা এ সমস্যায় পড়তো না, যদি না তারা মনোনয়ন বাণিজ্য করতো,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।"
দেশের উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, "আমরা অনেক সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এদেশে গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেছি। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের চমকপ্রদ আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, "গ্রামের সাধারণ জনগণ এই উন্নয়নের সুফল ভোট করছে।’ "উন্নয়নের এই ধারবাহিকতা অব্যাহত থাকলে দেশ আরো উন্নত এবং সমৃদ্ধশালী হবে", যোগ করেন তিনি।
দিনাজপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মাহবুবুর রহমানের ওপর বর্বরোচিত হামলাকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, "তাঁর দুটি আঙ্গুল সন্ত্রাসিরা কেটে নিয়ে গেছে এবং তার মাথায় আঘাত করেছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন যেহেতু সিএমএইচ এর উন্নত চিকিৎসা পেয়েছেন।"
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, "কি অপরাধ ছিল এই চিকিৎসকের? যখন তিনি কাজ সেরে বাসায় ফিরছিলেন, তখনই তাকে বর্বরোচিত হামলার শিকার হতে হলো। এটা একটা জঘন্য অপকর্ম।" বিএনপি-জামাতের প্রতি এই গোপন হামলা বন্ধের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে এই ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের উপযুক্ত শাস্তি বিধানের জন্যও বলেন।
এরআগে, প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহবুবুর রহমানকে দেখতে গিয়ে রোগীর শয্যাপাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছ থেকে তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য