বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের ফাঁসি কার্যকর
- জাতীয় - আদালত
- ১২ এপ্রিল ২০২০ - ৫ বছর আগে
- পড়া হয়েছে - ৩৪০৫০
ঢাকা, ১২ এপ্রিল ২০২০, রবিবারঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মুত্যুদন্ড প্রাপ্ত খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ১২ টা ১ মিনিটে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, "রাত ১২টা ১ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মাজেদকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়। রাত ১২ টা ১৫ মিনিটে তার মৃত্যুর ডিক্লারেশন দেয়া হয়েছে।" আইনমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, "জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আরো এক খুনির রায় কার্যকর করতে পেরেছি।" কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলামও জানান, "কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের ফাঁসি রাত ১২ টা ১ মিনিটে কার্যকর করা হয়।"
এর আগে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, "কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।" আইজি প্রিজন বলেন, "কারা বিধি অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড কার্যকরে যে সকল কর্মকর্তাগণ থাকেন তারা সকলে উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে তিনিসহ,আরো ছিলেন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (ঢাকার ডিসি), জেলার পুলিশ সুপার, জেলার সিভিল সার্জন, জেল সুপার, জেলার। এ নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ছয় খুনির ফাঁসি কার্যকর হলো। এর আগে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি খুনি বজলুল হুদা, আর্টিলারি মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহারিয়ার রশিদ খান ও ল্যান্সার মহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।"
গত বুধবার দুপুরে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এম হেলাল উদ্দিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। ওইদিন বিকেলেই সেই মৃত্যু পরোয়ানার ফাইল কারাগারে পৌঁছানো হয়। সন্ধ্যায় মাজেদ কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। রাতেই... সেই ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন পাঠানো হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি তার প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিলে সে ফাইল আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারাগারে পৌঁছানো হয়।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার ৪৫ বছর, নৃশংস ওই হত্যাকান্ডের মামলার ২৫ বছর এবং উচ্চ আদালতের রায়ে ৫ আসামির ফাঁসি কার্যকরের ১১ বছর পর গত সোমবার দিবাগত রাতে গ্রেফতার হয় খুনি মাজেদ। প্রায় ২৩ বছর মাজেদ ভারতে পালিয়ে ছিলেন বলে স্বীকার করেন। এখনও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি পলাতক রয়েছেন। তাঁরা হলেন- খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও এ এম রাশেদ চৌধুরী। তাঁরা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা। এই পাঁচ খুনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পলাতক অবস্থায় আছেন।
কেন্দ্রীয় কারা কর্মকর্তারা জানান, মাজেদের দন্ড কার্যকরে প্রধান জল্লাদ ছিলেন শাহজাহান, তার সহকারী ছিলেন জল্লাদ মনির, সিরাজসহ ১০ জনের টিম। রাত ১১ টার দিকে কারা মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি ফারদুল্লাহ মাজেদকে তওবা পড়ান। মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আগে মাজেদের সঙ্গে তার স্ত্রীসহ কয়েক স্বজন সন্ধ্যায় শেষ দেখা করেন। কারা কর্তৃপক্ষ পরিবারকে শেষ সাক্ষাৎ করার জন্য আসতে বলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মম, বর্বরোচিত ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তখন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। এদিকে আজ রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ফটকে জোরদার করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। একইসঙ্গে ছিলেন কারারক্ষীরাও।
মন্তব্য