English
বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪
...

উন্নয়ন প্রকল্প হোক জনস্বার্থেঃ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ফাইল ছবি

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ মার্চ, সরকার ডেস্কঃ "আমরা অবশ্যই উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করবো কিন্তু প্রকল্প নেওয়ার সময় এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, জনগণের জন্যই তা করা হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এমনভাবে গ্রহণ করুন, যাতে জনগণ এর কারণে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়" প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ নিজ দপ্তরে মহেশখালি - মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (এমআইডিআই) প্রকল্প উপস্থাপনকালে একথা বলেন। 

তিনি বলেন,"জনগণের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটানোই তাঁর সরকারের লক্ষ্য, যাতে তাঁরা সবাই একটি সুন্দর জীবন পেতে পারে। যখনই আমরা কোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করবো তখন আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে দরিদ্র জনগণের জীবন এবং জীবিকা কোনভাবেই থেমে না যায়।" উন্নয়ন প্রকল্পে নেয়া জমির মালিকদের সঠিকভাবে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এমআইডিআই প্রকল্পের মূল নকশা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবগণ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ও দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। কক্সবাজারের ব্যাপক সম্ভাবনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখন্ড সমুদ্রতটের অবস্থান এখানেই রয়েছে। কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে এবং একইসঙ্গে এটাকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তোলা হচ্ছে।"   

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "জাপান, চীন, ভারত এবং কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই মাতারবাড়িতে তাদের বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে তা কেবল মাতারবাড়ি অঞ্চলের উন্নয়নই নয়, সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বিরাট ভূমিকা রাখবে।" তিনি বলেন, "এক সময় কক্সবাজারে কিছুই ছিল না এবং সমগ্র এলাকার জনগণ কেবল মাত্র লবণ এবং পান চাষের ওপর ওপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে তাঁর সরকার কক্সবাজারকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে জেলার মাতারবাড়িসহ চর এলাকাতে গড়ে তোলা হচ্ছে শিল্প কারখানা।"

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, "বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে স্বাধীনতা এবং স্বল্প সময়ে একটি সংবিধান দিয়ে গেছেন এবং তিনি ক্ষুধা... ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মানুষের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ অর্জনের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর স্বপ্ন পূরণ হতে পারেনি কারণ, তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালরাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর অসমাপ্ত কাজকে সম্পন্ন করতেই আমরা এখন দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।"   

কক্সবাজারের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, "প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন মহাসড়কের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলযোগাযোগ স্থাপনের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে, যেখানে দ্রুতগতির রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার কাজও এগিয়ে চলেছে।"   
 
 তিনি আরও বলেন, "দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লার জেটি এবং একটি এলএনজি টার্মিনাল মাতারবাড়িতে গড়ে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি একটি বহুমুখী সমুদ্রবন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, সড়ক, রেল এবং এ সংক্রান্ত আরো বিভিন্ন প্রকল্পসহ মোট ৩৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সমুদ্র তীরবর্তী এই জেলা এক সময় খুবই অবহেলিত ছিল এবং এর জনগণের জীবনযাত্রার মান ও ছিল অমানবিক।" 

প্রায় ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের জন্য একটি বিরাট সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেছি।"

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী কর্মকর্তাগণ বলেন, "মিরেরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র তীরবর্তী অর্থনৈতিক করিডোর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পাঞ্চল (ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, সীতাকুন্ডু অর্থনৈতিক অঞ্চল), মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (এমআইডিআই) প্রকল্প এবং সাবরং ইকো ট্যুরিজম পার্ক এই অর্থনৈতিক করিডোরের অন্তর্ভূক্ত। 

তাঁরা আরও জানান যে, দেশের সর্ববৃহৎ জ্বালানি কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ প্লান্ট, কয়লা জেটি এবং একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মিত হচ্ছে মাতারবাড়িতে। এই প্রকল্পকে দ্রুত বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, "প্রকল্পটি জাইকা’র চলমান জরিপের ওপর নির্ভর করেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নির্মানাধীন ৩৭টি প্রকল্পের মধ্যে ১৫টিই জাপান সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে জাইকা’র বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।"   




মন্তব্য

মন্তব্য করুন