গত এক মাসে নাফ নদী ও এর আশপাশের সাগর এলাকা থেকে অন্তত একশত জেলে নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বোট মালিক ও মাছ ব্যবসায়ীরা। নিখোঁজ জেলেদের স্বজনদের দাবি, মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা এই নাফ নদী বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে পৃথক করেছে। এখানকার নদী, মোহনা এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ সাগরই মূলত হাজারো জেলের জীবিকার একমাত্র উৎস। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক জেলে অপহরণের ঘটনায় উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে অনেকেই সাগরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন, ফলে উপার্জনের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। এসব ঘটনায় জেলেদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে, আর সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।

অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রতিদিনই কেউ না কেউ নিখোঁজ হওয়ার খবর আসছে, অথচ এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ জেলেপাড়ার মানুষদের। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে অনেক পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জেলেরা বলছেন, সমুদ্র ও নদীপথে টহল জোরদার না থাকায় মিয়ানমারের আরাকান আর্মি সহজেই এসব অপহরণ চালিয়ে যেতে পারছে। অপহৃতদের অনেকের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। কিন্তু গরিব এসব পরিবার সেই টাকাও দিতে পারছে না। ফলে দিনকে দিন নিখোঁজের সংখ্যা বাড়ছে এবং আতঙ্ক আরও গভীর হচ্ছে। এর ফলে শুধু জেলেদের জীবন ও জীবিকাই হুমকিতে পড়েনি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় মাছ ব্যবসাও। বাজারে মাছের সরবরাহ কমে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়ও। এলাকাবাসী মনে করছেন, সীমান্ত অঞ্চলে এই ধরনের অপহরণ প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি হয়ে উঠেছে। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।