নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি–জামায়াতে মনোনয়ন যুদ্ধ

Date:

Share post:

বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে দলীয় মনোনয়নপ্রক্রিয়াকে ঘিরে প্রবল অস্থিরতা ও অসন্তোষের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও সহযোগী জামায়াতে ইসলামী—দুই দলেই মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক বিরোধ, ক্ষোভ ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি সম্প্রতি ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে, তবে তালিকা প্রকাশের পর থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেক জেলায় মনোনয়ন না পাওয়া নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন, এমনকি মেহেরপুর-২ আসনে জেলা বিএনপি সভাপতির মনোনয়ন বঞ্চনার পর দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতি দলীয় ঐক্য বজায় রাখার নির্দেশ দিলেও জেলা পর্যায়ে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সার্ভে-ভিত্তিক মনোনয়ন পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা উঠেছে, কারণ এতে স্থানীয় নেতাদের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না বলে অনেকের অভিযোগ। একইসঙ্গে মনোনয়নবঞ্চিতদের মনোবল ধরে রাখতে বিএনপি নেতৃত্ব আশ্বাস দিয়েছে যে, তাদের “দায়িত্ব ও সম্মানজনক ভূমিকা” দেওয়া হবে। তবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কয়েকজনকে সতর্ক করা হয়েছে, যা তৃণমূল পর্যায়ে আরও অস্বস্তি তৈরি করছে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীতেও মনোনয়ন নিয়ে অনুরূপ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি পুনরায় রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয় হয়ে ওঠা দলটি চার থেকে পাঁচটি আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে অভ্যন্তরীণ বিভাজনের মুখে পড়েছে। একাধিক জেলায় স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি উঠলেও নেতৃত্ব “দলীয় রীতি বজায় রাখার” অজুহাতে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এর ফলে জামায়াতের ভেতরেও ক্ষোভ ও আস্থাহীনতা বাড়ছে। দলীয় এক অংশ মনে করছে, মনোনয়ন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক হওয়া উচিত, যাতে স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। http://ফ্রিল্যান্সিং – ক্যারিয়ার গঠনের জন্য সেরা ও স্বাধীন পথ! thecloudemy.com https://www.facebook.com/cloudemy20

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী—দুই দলের মনোনয়নবিচার প্রক্রিয়া তাদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাকে উন্মোচিত করেছে। দলীয় নেতৃত্ব, স্থানীয় সংগঠন এবং প্রার্থীপদ প্রত্যাশীদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ায় ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনী প্রস্তুতি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিএনপির ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দলটি দীর্ঘদিন পর নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মনোনয়নবঞ্চিত নেতাকর্মীদের যদি কার্যকরভাবে সন্তুষ্ট করা না যায়, তবে অনেক আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। জামায়াতের ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঝুঁকি রয়েছে—তারা যদি মনোনয়নবিচারে অভ্যন্তরীণ সংকট কাটাতে না পারে, তবে সংগঠনের পুনর্গঠনের প্রয়াস বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

সার্বিকভাবে, মনোনয়ন নিয়ে বর্তমান বিরোধ দুই দলের জন্য বড় রাজনৈতিক পরীক্ষা হয়ে উঠেছে। এই বিরোধ শুধু প্রার্থী নির্ধারণের সীমায় নেই; এটি এখন দলীয় ঐক্য, নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা, এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনী কৌশলের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করছে। বিএনপি ও জামায়াত—দু’দলই এখন এক কঠিন বাস্তবতার মুখে, যেখানে অভ্যন্তরীণ সংহতি ও প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করতে পারলে আগামী নির্বাচনে কার্যকর উপস্থিতি বজায় রাখা কঠিন হবে।

Related articles

ব্রেইন স্ট্রোক: কীভাবে হয়, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

ব্রেইন স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এমন একটি গুরুতর চিকিৎসাগত অবস্থা, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় অথবা...

আয়কর রিটার্নে আপনার জমানো অর্থ কীভাবে উল্লেখ করবেন

প্রতিবছর করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়, যেখানে পুরো বছরের আয় ও ব্যয়ের পূর্ণ চিত্র উল্লেখ করতে হয়।...

বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কেন ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের তুলনায় বেশি?

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বর্ণের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো—ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের তুলনায়ও বাংলাদেশে...

সুদানের মুসলিমদের বেঁচে থাকার লড়াই: গৃহযুদ্ধ, ক্ষুধা, আর অনিশ্চয়তার ছায়া

সুদান আফ্রিকার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি প্রধানত মুসলিম দেশ, যেখানে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী।...