ঢাকা, ০৫ আগস্ট ২০২৫:
গত বছর (২০২৪) জুলাই মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছিল, তার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল গণভবন। তীব্র জনবিক্ষোভ, সরকারের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ এবং শেষ মুহূর্তের কিছু নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনটি। গণভবনের ভেতরে সেই সময়কার পরিবেশ কেমন ছিল, একগুঁয়েমি, ক্ষোভ আর শেষ ফোনকলের মধ্য দিয়ে কীভাবে রচিত হয়েছিল ক্ষমতার পালাবদলের চিত্র, তা নিয়ে এখনো নানা আলোচনা হয়।
জুলাইয়ের উত্তাল দিনগুলোতে যখন দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন তুঙ্গে, তখন গণভবনের ভেতরে পরিস্থিতি ছিল টানটান উত্তেজনাপূর্ণ। নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু জনগণের ক্ষোভের মাত্রা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হওয়া এবং সমাধানের পথ খুঁজে না পাওয়ায় এক ধরনের ‘একগুঁয়েমি’ কাজ করছিল বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণভবনে উপস্থিত সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা বাড়তে থাকে। সূত্র মতে, নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার বিষয়ে ক্রমাগত সতর্ক করা হচ্ছিল। এই সময়কালে, প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার ফফোনে কথা বলেছিলেন বলে জানা যায়। এই ফোনকলগুলো ছিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার শেষ চেষ্টা, কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল থেকেও জোরালো পদক্ষেপের জন্য চাপ আসছিল।
গণভবনের ভেতরে তখন ক্ষোভ আর হতাশা দানা বাঁধছিল। একদিকে জনরোষ, অন্যদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারার ব্যর্থতা। সরকারের ভেতরের বিভেদও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। কোনো কোনো নেতা মনে করছিলেন, আরও আগেই জনদাবি মেনে নেওয়া উচিত ছিল। এই সময়কার শেষ ফোনকলগুলো ছিল একদিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার শেষ অনুরোধ।
গণভবনের সেই শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তের সমাপ্তি ঘটে অপ্রত্যাশিত দ্রুততায়। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণা আসে, যা পুরো জাতিকে বিস্মিত করে। ক্ষমতার এই আকস্মিক পরিবর্তন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। গণভবনের সেই শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তা, একগুঁয়েমি, ক্ষোভ আর শেষ ফোনকলগুলো আজও দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে, যা স্মরণ করিয়ে দেয়, কীভাবে ইতিহাসের মোড় ঘুরে গিয়েছিল মাত্র কয়েকটি দিনে।

