বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শাহবাজ শরিফ তাঁর প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও আরোগ্য কামনা জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। গত ২৮ নভেম্বর লেখা চিঠিটি শনিবার রাতে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ হওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও আন্তর্জাতিক মহলে নতুন আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

চিঠির ভাষায় সহমর্মিতা ও মানবিক উদ্বেগ
শাহবাজ শরিফ তাঁর চিঠিতে লিখেছেন—
তিনি আশা করেন এই বার্তাটি খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারকে স্বস্তি ও মানসিক শক্তি দেবে। তিনি খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর শুনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তাঁর দ্রুত ও পূর্ণ সুস্থতা কামনা করেন। পাকিস্তানের জনগণ, সরকার এবং তাঁর ব্যক্তিগত পক্ষ থেকেও তিনি আরোগ্যের জন্য দোয়া জানান।
চিঠিতে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে ব্যথিত করেছে এবং অসুস্থতার এই কঠিন সময়ে পাকিস্তান তাঁর পাশে রয়েছে।
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা: সংকটময় কিন্তু স্থিতিশীল
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছেন।
গত রোববার তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তড়িঘড়ি করে তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাঁকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
গত কয়েকদিন তিনি প্রায় সাড়াহীন ছিলেন, যা চিকিৎসক ও পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে।
চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত শনিবার তাঁর শারীরিক অবস্থায় সামান্য উন্নতি দেখা গেছে এবং তিন দিন পর তিনি কথা বলেছেন। কিন্তু কিডনির কার্যকারিতা হঠাৎমাত্রায় কমে যাওয়ায় টানা চার দিন তাঁকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁর অবস্থা ‘সংকটাপন্ন কিন্তু নিয়ন্ত্রণে’, এবং পরিস্থিতির উন্নতি–অবনতি দুটোই হঠাৎ ঘটতে পারে।
চিঠিতে উন্নয়ন, রাজনীতি ও কূটনীতির স্বীকৃতি
চিঠিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র আরোগ্য কামনাই করেননি; তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে খালেদা জিয়ার অবদানের স্বীকৃতিও দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন—
বাংলাদেশের উন্নয়নে খালেদা জিয়ার অবদান পাকিস্তান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে খালেদা জিয়ার ভূমিকার প্রশংসা করেন।
এই স্বীকৃতি দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশের কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা।
রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া
চিঠি প্রকাশের পর বিএনপি নেতারা এটিকে পাকিস্তানের ‘মানবিক সহমর্মিতা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, খালেদা জিয়ার আন্তর্জাতিক পরিচিতি এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব এখনও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক ও নজরকে আকর্ষণ করে।
কিছু মহলে আলোচনা চলছে—এটি কি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি কূটনৈতিক দৃষ্টি আকর্ষণের একটি ইঙ্গিত?
শেষ দিকে শাহবাজ শরিফের বার্তা: প্রার্থনা ও শ্রদ্ধা
চিঠির শেষে শাহবাজ শরিফ লিখেছেন—
তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন, যেন খালেদা জিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে তাঁর দল ও জাতির জন্য আবার শক্তি, নেতৃত্ব এবং দিকনির্দেশনার উৎস হয়ে উঠতে পারেন।
এ ছাড়া তিনি খালেদা জিয়ার প্রতি তাঁর সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি শেষ করেন।

