ঢাকা মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে ভূমিকম্পের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। বিশেষ করে ৫ম তলা বা তার উপরের ভবনে বসবাসকারীদের জন্য ভুল সিদ্ধান্ত জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য তৈরি করতে পারে। প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান আর সেই মুহূর্তে সঠিক পদক্ষেপই আপনাকে বাঁচাতে পারবে।
৫ম তলা বা তার উপরে থাকলে—দৌড়াবেন না, আশ্রয় নিন!
উঁচু ভবনে থাকলে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করা সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ—
- সিঁড়ি খুব দ্রুত ভেঙে পড়তে পারে।
- মানুষজনের ধাক্কাধাক্কি ও আতঙ্কে সিঁড়ি অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
- অন্ধকার, ধুলো, বিশৃঙ্খলা—সব মিলিয়ে আটকে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
একটি বাস্তব তথ্য হলো—ভূমিকম্পে মারা যাওয়া বা গুরুতর আহত হওয়া মানুষের বেশিরভাগ সিঁড়িতেই বিপদের মুখে পড়ে।
কী করবেন? (Drop—Cover—Hold On)
- বিছানায় থাকলে: দ্রুত খাটের নিচে ঢুকে পড়ুন।
- রুমে থাকলে: মজবুত টেবিল বা ডেস্কের নিচে আশ্রয় নিন।
- আশ্রয় না পেলে: শক্ত দেয়ালের কোণে শরীর গুটিয়ে বসে মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখুন।
- মাথা সুরক্ষা: বালতি উল্টো করে, হেলমেট, ব্যাগ বা যেকোনো শক্ত জিনিস মাথার ওপর দিন।
- বারান্দা এড়িয়ে চলুন: রেলিং বা স্লাব ভেঙে পড়তে পারে।
আপনার জীবন নিরাপদ রাখার সর্বোত্তম উপায় হলো—যেখানে আছেন সেখানেই আশ্রয় নেওয়া এবং মাথা সুরক্ষিত রাখা।
১ম বা ২য় তলায় থাকলে—আপনার হাতে একমাত্র সুযোগ!
ভূমিকম্প শুরু হলে নিচের তলায় থাকা বাসিন্দাদের স্বল্প সময়ের জন্য বের হওয়ার সুযোগ থাকে। তবে দ্রুত সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
করণীয়
- দরজা খুলুন: কম্পন শুরু হওয়ার সাথে সাথে দরজা খুলে দিন, যেন জ্যাম না হয়।
- তাৎক্ষণিক নির্গমন: ১৫–২০ সেকেন্ডের মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে বাইরে নেমে আসুন।
- ভবন থেকে দূরে যান: অন্তত ১০০ ফুট দূরে অবস্থান করুন।
- খোলা মাঠ বা খোলা জায়গায় যান: দেয়াল, গেইট বা বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে থাকুন।
মনে রাখবেন—১ম ও ২য় তলা থেকে বের হওয়ার সুযোগ ক্ষণস্থায়ী। তাই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করলে ঝুঁকি বাড়বে।
যদি ধ্বংসস্তূপে আটকে যান—জীবন বাঁচানোর দ্রুত কৌশল
আটকে গেলে আতঙ্ক নয়, বুদ্ধিমত্তাই আপনাকে বাঁচাবে।
কি করবেন না
- চিৎকার করবেন না: এতে ধুলো ফুসফুসে ঢুকে পড়তে পারে এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
কি করবেন
- সংকেত দিন:
- হুইসেল থাকলে একটানা বাজান।
- না থাকলে তিনবার করে দেয়ালে বা পাইপে টোকা দিন (আন্তর্জাতিক রেসকিউ সিগন্যাল)।
- টর্চ অন রাখুন, কিন্তু বেশি কথা বলবেন না।
- কাপড় চেপে ধরুন যাতে ধুলো শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ না করে।
ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি—আজ থেকেই শুরু করুন
প্রস্তুতি ছাড়া ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া ভাগ্যের উপর নির্ভর করে, কিন্তু প্রস্তুতি থাকলে আপনি নিজের জীবনকে অনেকটাই সুরক্ষিত করতে পারবেন।
দৈনন্দিন নিরাপত্তা চেকলিস্ট
- বিছানার পাশে রাখুন:
- একজোড়া জুতা
- হেলমেট
- হুইসেল
- ভারী আসবাবপত্র সুরক্ষিত করুন: আলমারি, ফ্রিজ, টিভি দেওয়ালে বেঁধে রাখুন।
- গ্যাস সিলিন্ডার: চেইন দিয়ে মজবুতভাবে আটকে রাখুন।
- জরুরি চাবি: সবসময় হাতের কাছে রাখুন।
- দরজা যেন অটো লক না হয়।
সচেতনতাই জীবন বাঁচায়
ঢাকার মতো শহরে যেখানে ৫–৭ তলার ভবনই মানুষের প্রধান আবাসন, সেখানে ভূমিকম্পে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হলো সচেতনতা ও সঠিক সিদ্ধান্ত।

