ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রথমবারের মতো আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট চালু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই ব্যবস্থায় ভোট দিতে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৯ জন প্রবাসী বাংলাদেশি, যা প্রবাসী ভোটার অংশগ্রহণে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসি সূত্র জানায়, নিবন্ধনকারীদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪৯৯ জন এবং নারী ভোটার ২৮ হাজার ২৭৮ জন। এ ছাড়া দেশের ভেতর থেকেও অ্যাপটির মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন ৪৪ হাজার ৪২৮ জন ভোটার। তাদের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন ৪৪ হাজার ৩৬৯ জন, আর নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ৫৯ জন।

কারা এই ব্যবস্থায় ভোট দিতে পারবেন
এই পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার আওতায় তিন শ্রেণির ভোটারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে—
- বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি
- আইনি হেফাজতে থাকা ভোটার
- ভোটগ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী
ভোট দিতে হলে অবশ্যই ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
নিবন্ধন ও ভোট দেওয়ার পদ্ধতি
ইসি জানিয়েছে, অ্যাপে নিবন্ধনের পর যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ঠিকানায় ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হবে। ভোটার ব্যালটে ভোট দিয়ে নির্ধারিত ফিরতি খামে সেটি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন। ভোটের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যালট ব্যবস্থায় বিশেষ নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হয়েছে।
কোন কোন দেশে কার্যক্রম চলছে
বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও আফ্রিকা, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার বহু দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা এই অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করছেন। ইসি জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে আরও দেশে এই কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
ইসির লক্ষ্য ও প্রত্যাশা
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ লাখ প্রবাসী ভোটারকে যুক্ত করার উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, প্রযুক্তিনির্ভর এই উদ্যোগ সফল হলে ভবিষ্যতে প্রবাসী ভোটের একটি স্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য কাঠামো গড়ে উঠবে।
চ্যালেঞ্জ
তবে ভোটার সচেতনতা, সময়মতো ডাক পৌঁছানো, ঠিকানা যাচাই এবং আন্তর্জাতিক ডাক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলতা—এসব বিষয়কে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তারপরও প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের পথে এটিকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

