লিওনেল মেসির বহু প্রতীক্ষিত ‘গোট ট্যুর অব ইন্ডিয়া’ ভারতজুড়ে ব্যাপক উন্মাদনার সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারের উপস্থিতি দেখতে লাখো ভক্তের চোখ ছিল তার দিকেই। তবে এই উচ্ছ্বাসের মধ্যেই কিছু আয়োজনে বিশৃঙ্খলার খবর সামনে এসেছে, বিশেষ করে কলকাতার অনুষ্ঠানে ব্যবস্থাপনার ঘাটতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
সমালোচকদের একাংশের মতে, বিপুল অর্থ ব্যয় করে লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো ডে পলের মতো আন্তর্জাতিক ফুটবল তারকাদের ভারতে আনা হলেও দেশের ঘরোয়া ফুটবল লিগ অর্থসংকটের কারণে বন্ধ—এই বৈপরীত্য সহজে উপেক্ষা করা যায় না। ফুটবলের উন্নয়নের বদলে তারকাকেন্দ্রিক আয়োজন কতটা যৌক্তিক, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।

তবে এসব বিতর্কের মাঝেও ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের জন্য মেসির সফর ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম সেরা ফুটবলারের খেলা বা উপস্থিতি কাছ থেকে দেখার সুযোগ জীবনে একবারই আসে অনেকের। আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বহু ভক্তের কাছে মেসিকে এক নজর দেখাই ছিল স্বপ্নপূরণের সমান।
ভারত সফর শেষ করে মেসি নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও বার্তায় ভারতীয় সমর্থকদের উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে আবার ভারতে ফেরার আশ্বাস দেন তিনি—হোক তা কোনো ম্যাচ কিংবা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে।
এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল মেসির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ। অনন্ত আম্বানির প্রতিষ্ঠিত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকেন্দ্র ভান্তারায় মেসির উপস্থিতি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন ও কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা যায় তাকে, যা সফরটিকে কেবল মাঠের খেলায় সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকটিও সামনে এনেছে।
সফরের সময় মেসির হাতে দেখা গেছে একটি অত্যন্ত বিরল ও বিলাসবহুল ঘড়ি— রিচার্ড মিল RM 003-V2 GMT টুরবিয়ন ‘এশিয়া এডিশন’। মাত্র ১২টি তৈরি হওয়া এই ঘড়ির কালো কার্বন কেস ও স্কেলেটন ডায়াল একে করে তুলেছে অনন্য। আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য প্রায় ১১ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৪ কোটি টাকারও বেশি। অনন্ত আম্বানির পক্ষ থেকে এই ঘড়ি উপহার দেওয়াকে অনেকেই ব্যক্তিগত সৌহার্দ্য, সম্মান ও বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
এদিকে অনন্ত আম্বানির হাতেও নজর কেড়েছে আরেকটি দুর্লভ ঘড়ি— রিচার্ড মিল RM 056 স্যাফায়ার টুরবিয়ন। প্রায় ৫০ লাখ ডলার মূল্যের এই ঘড়িটি বিশ্বের অন্যতম দামী ও বিরল ঘড়ি হিসেবে পরিচিত, যা বিলাসিতা ও সংগ্রহের জগতে আলাদা মর্যাদা বহন করে।
সবমিলিয়ে, লিওনেল মেসির ভারত সফর একদিকে যেমন উন্মাদনা, স্মৃতি ও ব্যক্তিগত সৌহার্দ্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে আয়োজনের মান, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও অতিরিক্ত বিলাসিতার প্রশ্নও সামনে এনেছে। এই সফর ভারতীয় ফুটবলে নতুন আলোচনার জন্ম দিলেও ভবিষ্যতে তারকা সংস্কৃতির পাশাপাশি ঘরোয়া ফুটবলের উন্নয়নে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

