ভারতের মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ গড়ার ঘোষণা—রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়, আলোচনায় বাংলাদেশও

Date:

Share post:

ভারতের রাজনীতিতে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বাবরি মসজিদ বিতর্ক। তবে এবার আলোচনার কেন্দ্র অযোধ্যা নয়—পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ। রাজ্যের এক তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) বিধায়কের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, পুরো ভারতীয় রাজনীতিতেই আগুন জ্বলে উঠেছে। আর এই আগুনে ঘি ঢেলেছে বাংলাদেশের নাম উঠে আসা।

তৃণমূল বিধায়কের বিস্ফোরক ঘোষণা

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই জানিয়েছে, কয়েক দিন আগে টিএমসি-র বিধায়ক হুমায়ুন কবির ঘোষণা দেন—আগামী ৬ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় নতুন করে বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে
তার কথায়, “৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। নির্মাণে তিন বছর সময় লাগবে। বহু মুসলিম নেতা উপস্থিত থাকবেন।”

এই ৬ ডিসেম্বর তারিখই ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙার দিন, তাই তাঁর ঘোষণা তৎক্ষণাৎ দেশব্যাপী আলোচনায় চলে আসে।

তৃণমূলের বিব্রত অবস্থান

তৃণমূল কংগ্রেস দ্রুতই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে। দলের বিধায়ক নির্মল ঘোষ সরাসরি বলেন—হুমায়ুন কবির দলের সীমা অতিক্রম করেছেন।

তিনি বলেন:
“তিনি এখন দলের সঙ্গে যোগাযোগে নেই। তাঁর বক্তব্য দলের নয়। দল এসব মানে না। তিনি সীমা ছাড়িয়েছেন।”

এ মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, টিএমসি এবার রক্ষণাত্মক অবস্থানে।

বিজেপির তীব্র আক্রমণ: ‘বাবরি নয়, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ তৈরি করছে টিএমসি’

পাল্টা আক্রমণে নেমেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং সবচেয়ে আগুনঝরা প্রতিক্রিয়া দেন।
তার অভিযোগ—টিএমসি মসজিদ নয়, বরং পশ্চিমবঙ্গে “বাংলাদেশের ভিত্তিপ্রস্তর” স্থাপন করতে চাইছে।

তার আরও অভিযোগ:
“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের সমর্থনে চলছে। বাংলার হিন্দুরা ভুলবে না। হিন্দুদের মৃতদেহের রাজনীতি বেশিদিন চলবে না।”

বিজেপি নেতা অশ্বিনী কুমার চৌবে বলেন,
“বাবরের নামে এই দেশে কোনো মন্দির-মসজিদ তৈরি হবে না। এটা সমাজে বিষ ছড়ানোর চেষ্টা মাত্র।”

দলের আরেক মুখপাত্র শেখজাদ পুনাওয়ালা আরও তীব্র মন্তব্য করে বলেন—এটা টিএমসি-র পুরোনো “ভোটব্যাংক তোষণের রাজনীতি”

ব্যক্তি ও কোম্পানি করদাতাদের আয়কর, ভ্যাট এবং ব্যবসায়িক বিষয়ক পরামর্শ, আয়কর রিটার্ন দাখিল ও প্রশিক্ষণ সেবা প্রদান করে।

http://taxvatbusiness.tch24.com

https://www.facebook.com/TVBC20

কংগ্রেসের আলাদা অবস্থান: ‘মসজিদের বিরুদ্ধে বিরোধিতা অর্থহীন’

এদিকে কংগ্রেস নেতা উদিত রাজ ভিন্ন সুরে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন,
“যদি মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে কেউ আপত্তি না তোলে, তাহলে মসজিদের ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়? ধর্মীয় স্বাধীনতা সবার।”

তিন দশকের পুরোনো ক্ষত আবারও তাজা

বিষয়টি যে এত সংবেদনশীল—তার কারণ বাবরি মসজিদের অতীত।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদের বিতর্কিত কাঠামো করসেবকরা ভেঙে ফেলেছিল। সেই ঘটনার পর থেকেই ভারতের রাজনীতি দু’ভাগে বিভক্ত। এই ইস্যু বিজেপিকে ক্ষমতা পর্যন্ত এনে দিয়েছে। বর্তমান সরকার অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ করে নির্বাচনের ঠিক আগে তার উদ্বোধন করে ব্যাপক ভোট-রাজনীতি চালিয়েছে।

বাংলাদেশের নাম কেন?

হুমায়ুন কবিরের ঘোষণার পর বিজেপির অভিযোগ—টিএমসি নাকি বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের ভোটব্যাংক নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়। এ কারণেই পশ্চিমবঙ্গের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মাঝে বাংলাদেশের নামও ঢুকে গেছে বিতর্কে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সঙ্কট

এই বিতর্ক এখন কয়েকটি বড় প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে—

  • টিএমসি কি সত্যিই দলীয় অবস্থান থেকে সরে এসেছে?
  • বাংলাদেশ প্রসঙ্গ কি শুধু রাজনৈতিক প্রচারণা, নাকি তার পেছনে গভীর রাজনীতির হিসাব আছে?
  • পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় মেরুকরণ আরও বাড়বে কি?
  • ৩৩ বছর আগের বাবরি ইস্যু কি আবার নতুনভাবে ভারতীয় নির্বাচনী রাজনীতির কার্ড হয়ে উঠছে?

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার একটি ঘোষণা আবারও ভারতের রাজনীতির শিরায় শিরায় স্পর্শ করেছে বাবরি-রামমন্দির বিতর্ককে। এতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি উত্তপ্ত তো বটেই, বিজেপি–তৃণমূল–কংগ্রেস তিন দলেরই বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্য প্রমাণ করছে—এটি আগামী দিনে আরও বড় রাজনৈতিক ঝড়ের কারণ হতে পারে।

আর সেই ঝড়ে বাংলাদেশের নামও জড়িয়ে পড়েছে, যা বিষয়টিকে আরও সংবেদনশীল ও কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে।

Related articles

শীলমান্দি ইউনিয়নের তিনবার নির্বাচিত জনপ্রিয় মেম্বার আনোয়ার হোসাইনকে মিথ্যা অভিযোগে হয়রানি

নরসিংদী: শীলমান্দি ইউনিয়নের এক নং ওয়ার্ডের তিনবার নির্বাচিত এবং অতি জনপ্রিয় মেম্বার আনোয়ার হোসাইনকে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনী প্রভাব বজায় রাখার উদ্দেশ্যে কিছু অসৎ ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে তাকে দমন করতে চাইছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আনোয়ার হোসাইন একজন প্রখর নেতৃত্বশীল, সৎ ও জনগণের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। তার ন্যায়পরায়ণএবং নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের কারণে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাকে লক্ষ্য করে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করেছে। এই ঘটনার পর জেলা প্রশাসন নরসিংদী এবং পুলিশ সুপার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, "আনোয়ার হোসাইনকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সঠিক বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।” যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সমাজকর্মী এবং Best Food Provider Inc-এর চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আনোয়ার ভাইকে হয়রানি করা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। স্থানীয় জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে তার মুক্তি এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রতিবাদ করছে। আমরা আশা করি প্রশাসন দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ নেবে।” স্থানীয়রা মনে করেন, আনোয়ার হোসাইনের মুক্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা শুধু তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং এলাকার শান্তি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বার্থেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রায় ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি মেসিকে উপহার দিলেন অনন্ত আম্বানি

লিওনেল মেসির বহু প্রতীক্ষিত ‘গোট ট্যুর অব ইন্ডিয়া’ ভারতজুড়ে ব্যাপক উন্মাদনার সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারের উপস্থিতি...

বিদেশে বসবাসরত ভোটার নিবন্ধন সাড়ে ৪ লাখ ছাড়িয়েছে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রথমবারের মতো আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট চালু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।...

কেন টানা দ্বিতীয়বার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ বন্ধ রাখছে অন্তর্বর্তী সরকার?

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাংলাদেশে শুরু হয় বিজয় দিবস ঘিরে প্রস্তুতি। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বরের অন্যতম প্রধান আয়োজন হিসেবে...