ইসলামে মেহমানদারি ও কর্তব্য: নবীর আদর্শ ও শিষ্টাচারের নির্দেশনা

Date:

Share post:

মেহমান পেয়ে আনন্দিত হওয়া মানুষের স্বভাবজাত একটি গুণ। ইসলামে মেহমানদারির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং নবী করিম (সা.) নিজেও মেহমানদের সম্মান ও আপ্যায়ন করতেন। নবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে মেহমানকে সম্মান দেওয়া এবং তার সেবা করা আমাদের জন্য একটি বড় দায়িত্ব।

ইসলামে মেহমানদারির শিষ্টাচার সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হাদিস রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখিরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০১৮)। এই নির্দেশনার মাধ্যমে মেহমানদারির গুরুত্ব এবং মেহমানকে যথাযথ সম্মান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

মেজবানের কর্তব্য:

  • মুত্তাকিদের দাওয়াত দেওয়া: পরহেজগার ব্যক্তিদের দাওয়াত দেওয়া এবং পাপিষ্ঠদের পরিহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবী (সা.) বলেছেন, “তুমি মুমিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গী হবে না, এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেজগার লোকে খায়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৩২)।

  • আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের দাওয়াত দেওয়া: মেহমানদারির ক্ষেত্রে শুধু ধনীদের দাওয়াত দেওয়া ঠিক নয়, বরং দরিদ্র ও আত্মীয়-স্বজনদেরও সম্মান দিতে হবে। নবী (সা.)-এর বাণী অনুযায়ী, “যে অলিমায় শুধু ধনীদের দাওয়াত করা হয় এবং গরিবদের দাওয়াত করা হয় না, সে অলিমা সবচেয়ে নিকৃষ্ট।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫১৭৭)।

মেহমানের কর্তব্য:

  • দাওয়াত গ্রহণ করা: মেহমানের জন্য দাওয়াত গ্রহণ করা কর্তব্য, কেননা এটি শুধু খাবারের ব্যাপার নয়, বরং সম্মান প্রদর্শনের একটি প্রক্রিয়া। নবী (সা.) বলেছেন, “এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক পাঁচটির একটি, দাওয়াত কবুল করা।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৪০)।

  • অতিথি ছাড়া অন্য কাউকে না নেওয়া: দাওয়াত গ্রহণের সময় মেহমানকে অবশ্যই মেজবানের অনুমতি নিয়ে অন্যদের আনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে, অতিরিক্ত কাউকে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করা হলে অবশ্যই মেজবানের অনুমতি নেওয়া উচিত।

এছাড়া, মেহমানের সম্মান জানাতে খাবার দ্রুত পরিবেশন, ডান দিক থেকে খাবার পরিবেশন এবং খেতে খেতে মেহমানের সঙ্গে আনন্দদায়ক কথোপকথন করা গুরুত্বপূর্ণ। খাবার পরিবেশনের শিষ্টাচার, যেমন খাবার শেষে পাত্র না উঠানো এবং মেহমানের সম্মান বজায় রেখে পরিবেশন করা ইসলামের শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত।

ইসলামে মেহমানদারি শুধু খাবার পরিবেশনই নয়, বরং সামাজিক সম্মান, শিষ্টাচার এবং আন্তরিকতার প্রতীক। এটি মানুষের হৃদয় ও সম্পর্ককে দৃঢ় করে এবং সমাজে সৌহার্দ্য বজায় রাখে।

Related articles

ব্রেইন স্ট্রোক: কীভাবে হয়, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

ব্রেইন স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এমন একটি গুরুতর চিকিৎসাগত অবস্থা, যেখানে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় অথবা...

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি–জামায়াতে মনোনয়ন যুদ্ধ

বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে দলীয় মনোনয়নপ্রক্রিয়াকে ঘিরে প্রবল অস্থিরতা ও অসন্তোষের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও সহযোগী...

আয়কর রিটার্নে আপনার জমানো অর্থ কীভাবে উল্লেখ করবেন

প্রতিবছর করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়, যেখানে পুরো বছরের আয় ও ব্যয়ের পূর্ণ চিত্র উল্লেখ করতে হয়।...

বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কেন ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের তুলনায় বেশি?

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বর্ণের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো—ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের তুলনায়ও বাংলাদেশে...