কেন টানা দ্বিতীয়বার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ বন্ধ রাখছে অন্তর্বর্তী সরকার?

Date:

Share post:

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাংলাদেশে শুরু হয় বিজয় দিবস ঘিরে প্রস্তুতি। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বরের অন্যতম প্রধান আয়োজন হিসেবে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হতো বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ—যেখানে প্রদর্শিত হতো দেশের সামরিক শক্তি ও রাষ্ট্রীয় গৌরব।

কিন্তু টানা দ্বিতীয়বারের মতো এবারও বিজয় দিবসের সেই ঐতিহ্যবাহী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ক্ষমতায় আসার চার মাসের মাথায়, গত বছর নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ স্থগিত করে সরকার। এক বছর পরও সেই সিদ্ধান্ত বহাল থাকল।

গত ১৯ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, বিজয় দিবসে কোনো অস্থিরতার আশঙ্কা নেই এবং কর্মসূচির ঘাটতিও থাকবে না। বরং আগের চেয়ে বেশি আয়োজন থাকবে। তবে কুচকাওয়াজ এবারও হচ্ছে না। শুধু রাজধানী নয়, জেলা-উপজেলা পর্যায়েও কুচকাওয়াজ বাতিল করা হয়েছে।

সরকারের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, গত আগস্টের পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৬০–৭০ হাজার সেনাসদস্য মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ সময় ধরে বাহিনী মোতায়েন থাকায় কুচকাওয়াজের মতো বড় আয়োজনের প্রস্তুতির সুযোগ পাওয়া যায়নি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও একই যুক্তি তুলে ধরে বলেন, কুচকাওয়াজ বাতিলের পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই—সময় ও প্রস্তুতির অভাবই মূল বিষয়।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি এতটা সরল নয়।

বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, কুচকাওয়াজ হলে রাষ্ট্রপতিকে সামরিক বাহিনীর সালাম গ্রহণ করতে হয়। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সামনে আনাটা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বিব্রতকর হতে পারে। এ কারণেও কুচকাওয়াজ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবায়দা নাসরীন বলেন, বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়—এটি শৃঙ্খলা, কৌশল, উদ্যম এবং রাষ্ট্রীয় শক্তির প্রতীক। অন্য আয়োজন দিয়ে এটিকে প্রতিস্থাপন করা যায় না।

তার মতে, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিলে নানা প্রশ্ন থেকেই যাবে। কুচকাওয়াজ বন্ধ রাখা ভবিষ্যতে আরও ঐতিহ্যবাহী আয়োজন বাতিলের ইঙ্গিতও হতে পারে।

অন্যদিকে সরকার জানিয়েছে, বিজয় দিবস উদযাপনে ঘাটতি থাকছে না। ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা, জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, তিন বাহিনীর ফ্লাই-পাস্ট, সারাদেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিজয় মেলা, শিশুদের প্রতিযোগিতা, বিনা টিকিটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন—সবই থাকছে।

এবার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার জাতীয় পতাকা হাতে স্কাইডাইভ করে বিশ্বরেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—বিজয় দিবসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতীক, সেই কুচকাওয়াজ কেন বারবার বাদ পড়ছে?

আওয়ামী লীগ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একে “প্রতীকী আত্মসমর্পণ” বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, যারা ১৯৭১-এর পরাজিত শক্তির ছায়ায় রাজনীতি করেছে, তারা বিজয়ের সামরিক প্রতীক কীভাবে উদযাপন করবে?

সব মিলিয়ে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়—এটি মুক্তিযুদ্ধের আবেগ, রাষ্ট্রীয় গৌরব ও আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ। তাই এর অনুপস্থিতি ঘিরে প্রশ্ন, বিতর্ক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ—সবই থামছে না।

Related articles

শীলমান্দি ইউনিয়নের তিনবার নির্বাচিত জনপ্রিয় মেম্বার আনোয়ার হোসাইনকে মিথ্যা অভিযোগে হয়রানি

নরসিংদী: শীলমান্দি ইউনিয়নের এক নং ওয়ার্ডের তিনবার নির্বাচিত এবং অতি জনপ্রিয় মেম্বার আনোয়ার হোসাইনকে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনী প্রভাব বজায় রাখার উদ্দেশ্যে কিছু অসৎ ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে তাকে দমন করতে চাইছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আনোয়ার হোসাইন একজন প্রখর নেতৃত্বশীল, সৎ ও জনগণের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। তার ন্যায়পরায়ণএবং নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের কারণে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাকে লক্ষ্য করে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করেছে। এই ঘটনার পর জেলা প্রশাসন নরসিংদী এবং পুলিশ সুপার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, "আনোয়ার হোসাইনকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সঠিক বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।” যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সমাজকর্মী এবং Best Food Provider Inc-এর চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আনোয়ার ভাইকে হয়রানি করা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। স্থানীয় জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে তার মুক্তি এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রতিবাদ করছে। আমরা আশা করি প্রশাসন দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ নেবে।” স্থানীয়রা মনে করেন, আনোয়ার হোসাইনের মুক্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা শুধু তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং এলাকার শান্তি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বার্থেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রায় ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি মেসিকে উপহার দিলেন অনন্ত আম্বানি

লিওনেল মেসির বহু প্রতীক্ষিত ‘গোট ট্যুর অব ইন্ডিয়া’ ভারতজুড়ে ব্যাপক উন্মাদনার সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারের উপস্থিতি...

বিদেশে বসবাসরত ভোটার নিবন্ধন সাড়ে ৪ লাখ ছাড়িয়েছে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রথমবারের মতো আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট চালু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।...

নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত করতে হবে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এবারের নির্বাচন সহজ হবে না। ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তাই যেকোনো মূল্যে নির্বাচন...