রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের প্রায় প্রতিটি বড় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, এমনকি হত্যাকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধীরা। গঠিত হয়েছে শত শত চক্র, যারা স্থানীয়ভাবে ‘বড় ভাই’দের ছত্রছায়ায় বা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
শিল্পশহর গাজীপুরে কমপক্ষে ৩০টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। গাজীপুর সদর, টঙ্গী, কোনাবাড়ী, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, মারামারি, এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটিয়েছে তারা। ইলিয়াস মোল্লা গ্রুপ নামে একটি কিশোর চক্র দেশীয় অস্ত্রসহ ধরা পড়লেও, তার অনুসারীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ফাঁকা গুলি ছোড়ার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
পর্যটন শহর কক্সবাজারেও শতাধিক কিশোর চক্র সক্রিয়, যার বড় অংশজুড়ে রয়েছে রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরীরা। কলাতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। স্থানীয় পুলিশ ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা কিশোরদের গ্রেফতার করেছে।
চট্টগ্রাম শহরে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারধর, খুন— সব ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংগুলো। এখানেও গ্যাংগুলো ‘বড় ভাই’ পরিবর্তন করে নতুন নেতৃত্বে সংগঠিত হচ্ছে। পুলিশ এখন তালিকা হালনাগাদ করছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডেই কিশোর গ্যাং চক্র সক্রিয়। অতীতে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে এসব গ্যাং তৈরি হলেও এখন তারা নিজেদের ব্যানারে স্বতন্ত্রভাবে অপরাধ করছে।
সিলেটে কিশোর অপরাধীদের একটি অংশ টমটম চালক বা স্কুলপড়ুয়া। তারা আগে একটি দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এখন নতুন আশ্রয়দাতা খুঁজছে। বিভিন্ন এলাকায় কিশোরদের ছবি সংবলিত ব্যানারে রাজনৈতিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে।

ময়মনসিংহ মহানগরের পার্ক ও কোচিংপাড়া এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা মারাত্মক। তারা শিক্ষার্থী ও পার্ককর্মীদের হয়রানি করছে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা সভায় এই সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
কুমিল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা ২০টি ছাড়িয়েছে। গত ৮ বছরে কিশোরদের হাতে ঘটেছে ১২টি হত্যাকাণ্ড। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় তারা।
খুলনায় কিশোর গ্যাং হয়ে উঠেছে নতুন সামাজিক আপদ। মহানগরের আটটি থানা এলাকায় পুলিশের তালিকায় কিশোর অপরাধী রয়েছে ২০৮ জন। তারা বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ এলাকায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছে, আইন অমান্য করে অবস্থান করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চত্বরে।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেবল পুলিশি অভিযান নয়, অভিভাবকদের সচেতনতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং, এবং সামাজিক উদ্যোগ প্রয়োজন। কিশোর অপরাধীদের অপরাধমূলক জীবন থেকে ফিরিয়ে আনতে সমন্বিত পুনর্বাসন ও মনোসামাজিক সহায়তা জরুরি।

