গাইবান্ধা শহরের প্রাণকেন্দ্র কে এন রোডে অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৬২ বছর পার করলেও এখনো শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে। নামে সরকারি স্কুল হলেও বাস্তবে এটি যেন শুধুই কাগজে-কলমে চলা একটি প্রতিষ্ঠান।
১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে সরকারিকরণ হলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়েনি উল্লেখযোগ্যভাবে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রতি শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা গড়ে ৩–৪ জন মাত্র। অনেক বছর এক বা একাধিক শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীও ছিল না বলে রেকর্ডে দেখা যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, বিদ্যালয়ে পড়ালেখার পরিবেশ নেই, আছে শুধু ফাঁকিবাজি ও নিয়ম রক্ষার কার্যক্রম। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে যথাক্রমে ৩ ও ৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া দুটি ক্লাস এক কক্ষে চালানো হয়, যা নিয়ে অভিভাবকদের রয়েছে দীর্ঘদিনের অভিযোগ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানকার শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করতে পারেনি। বরং অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকরা উর্ধ্বতনদের ‘ম্যানেজ’ করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে বছরের পর বছর চাকরি করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ছয়জন শিক্ষিকা ও একজন দপ্তরি। শিক্ষিকারা নিজেদের বেতনের টাকায় শিক্ষার্থীদের দুপুরে খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন, যাতে তারা স্কুলে টিকে থাকে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা খিচুড়ি খেয়েই স্কুল ছেড়ে চলে যায়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা শিরিন বলেন, “শিক্ষার্থী বাড়াতে আমরা বাড়ি বাড়ি গেছি, অনুরোধ করেছি—but আশানুরূপ ফল আসেনি।”শিক্ষিকারা জানান, তারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলেও আশপাশের ভালো মানের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারণে শিক্ষার্থীরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, “স্কুলটির চারপাশে নামকরা স্কুল রয়েছে। সবাই সন্তানদের সেখানে ভর্তি করাচ্ছে। ফলে কে এন রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়ছে অবহেলার শিকার।”এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লক্ষণ কুমার দাস বলেন, “স্কুলটির পরিস্থিতি আমরা জানি। জেলা পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থী বাড়াতে চেষ্টা চলছে।”
তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন—যেখানে ৬২ বছরেও শিক্ষার্থী বাড়েনি, শিক্ষার মানও উন্নত হয়নি, সেখানে কেবল চেষ্টা চালিয়ে কী হবে? নাকি সময় এসেছে এই ‘নামকাওয়াস্তে’ স্কুলটির জন্য কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার?

