প্রতিবছর করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়, যেখানে পুরো বছরের আয় ও ব্যয়ের পূর্ণ চিত্র উল্লেখ করতে হয়। সেই সঙ্গে করযোগ্য আয়ের ওপর নির্ধারিত হারে কর পরিশোধ করাও বাধ্যতামূলক। তবে বছরের শেষে অনেকেরই কিছু অর্থ সঞ্চিত থাকে—যা হয় ব্যাংক হিসাবে, নয়তো নগদে। এই সঞ্চিত অর্থ আয়কর রিটার্নে দেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পরবর্তী বছরে আপনার নতুন আয় ও ব্যয়ের হিসাব করতে গেলে আগের বছরের সঞ্চিত টাকাও বিবেচনায় নিতে হবে। তাই ব্যাংক হিসাব ও নগদ—উভয় ক্ষেত্রের অর্থ স্পষ্টভাবে রিটার্নে দেখানো উচিত। মনে রাখতে হবে, ব্যাংকে থাকা টাকা ও হাতে থাকা নগদ এক নয়; তাই হিসাব প্রদর্শনের সময় সতর্ক থাকতে হবে।

ব্যক্তি ও কোম্পানি করদাতাদের আয়কর, ভ্যাট এবং ব্যবসায়িক বিষয়ক পরামর্শ, আয়কর রিটার্ন দাখিল ও প্রশিক্ষণ সেবা প্রদান করে।
ব্যাংক হিসাবের টাকা দেখানোর নিয়ম: ব্যাংক হিসাবের স্থিতি দেখানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ ধরা হয়—৩০ জুন। ওই তারিখে আপনার ব্যাংক হিসাবে যত টাকা থাকবে, সেটিই রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। যদি একাধিক ব্যাংক হিসাব থাকে, তবে প্রতিটি হিসাবের ৩০ জুনের ব্যালান্স আলাদাভাবে দেখাতে হবে। অনেকে নিজের অ্যাকাউন্টে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবের টাকা জমা বা উত্তোলন করেন। এতে লেনদেনের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। অনেক সময় এ কারণে অনেকে ব্যাংক হিসাবের তথ্য গোপন করার চেষ্টা করেন—যা ভবিষ্যতে বড় জটিলতা ডেকে আনতে পারে। তাই নিজের ব্যাংক হিসাব শুধু ব্যক্তিগত আয়-ব্যয়ের জন্য ব্যবহার করুন। অন্য কারও টাকা আপনার হিসাবে এলে তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন। এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড)–এর নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ লাখ টাকার বেশি যেকোনো লেনদেন অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে।
নগদ টাকার হিসাব: অনেকে ভাবেন, আয়কর রিটার্নে বেশি করে নগদ টাকা দেখালে ভবিষ্যতে সুবিধা হবে। এটি ভুল ধারণা। অস্বাভাবিক পরিমাণ নগদ টাকা দেখালে কর কর্মকর্তাদের সন্দেহ হতে পারে এবং আপনার ফাইল অডিটে পড়তে পারে। অনেক করদাতা না বুঝে ২০–৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ দেখিয়ে দেন, কেউ আবার হিসাব না মেলাতে পারায় ইচ্ছাকৃতভাবে নগদ অংশ বাড়িয়ে দেন—যেন নিজের ঘরেই “মিনি ব্যাংক” খুলে রেখেছেন। এটি মোটেও সঠিক পদ্ধতি নয়। বাস্তবভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, আমরা সাধারণত খুব অল্প পরিমাণ নগদ টাকা বাসায় রাখি। তাই ৩০ জুন তারিখে হাতে যে পরিমাণ নগদ অর্থ বাস্তবে ছিল, কেবল সেটিই রিটার্নে দেখানো উচিত।
অতিরিক্ত নগদ দেখানোর পেছনের কারণ: আইনের কিছু ফাঁকফোকরের কারণে অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে নগদ টাকা বেশি দেখান। যেমন—বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের সঙ্গে সমবায়ের মতো করে টাকা জমিয়ে রাখার প্রথা রয়েছে, যার কোনো আনুষ্ঠানিক দলিল থাকে না। পরে এই টাকায় কেউ জমি বা সম্পদ কিনলে রিটার্নে তা বিনিয়োগ হিসেবে দেখানো যায়। তখন আয় উৎস হিসেবে যদি “ক্যাশ ইন হ্যান্ড” বা হাতে থাকা নগদ অর্থ দেখানো থাকে, তা ওই বিনিয়োগের বৈধ উৎস হিসেবে গণ্য হয়। ফলে জমি কেনার অর্থ বা সঞ্চয়ের টাকা—উভয়ই বৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

