সুদান আফ্রিকার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি প্রধানত মুসলিম দেশ, যেখানে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তবে গত কয়েক বছর ধরে দেশটি ভয়াবহ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদানের সেনাবাহিনী (Sudanese Armed Forces – SAF) ও আধাসামরিক বাহিনী Rapid Support Forces (RSF)-এর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়, যা এখনো থামেনি। এই সংঘাতে লক্ষাধিক সাধারণ মানুষ—যাদের অধিকাংশই মুসলিম—গৃহহীন, ক্ষুধার্ত ও চিকিৎসাহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। রাজধানী খার্তুম থেকে শুরু করে দারফুর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে বোমা হামলা, ড্রোন আক্রমণ ও গণহত্যার মতো ঘটনাগুলো প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। উত্তর দারফুরের এল ফাশের এলাকায় RSF-এর এক ড্রোন হামলায় অন্তত ৫৭ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও এই যুদ্ধ বিভাজন তৈরি করেছে—একদিকে মুসলিম সেনাবাহিনী ও অন্যদিকে মুসলিম আধাসামরিক বাহিনী, অথচ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন সাধারণ মুসলিম জনগণ। dpbsonline.com

ধর্মীয় দিক থেকেও সুদানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার কিছু কঠোর ইসলামী আইন সংস্কার করেছে—যেমন ধর্মত্যাগের (অ্যাপোস্টেসি) শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল করা হয়েছে, এবং অমুসলিমদের জন্য কিছু সামাজিক স্বাধীনতা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব পরিবর্তন মুসলিম সমাজের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে; কেউ এটিকে ইতিবাচক সংস্কার বলছেন, আবার কেউ ধর্মীয় পরিচয়ের হুমকি মনে করছেন। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক জিহাদি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (IS) সুদানে নতুন করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে, এবং বিদেশি যোদ্ধাদের সেখানে “জিহাদে যোগ দেওয়ার” আহ্বান জানাচ্ছে। এটি দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য নতুন এক হুমকি হয়ে উঠছে। https://www.facebook.com/DPBS20
বর্তমানে সুদানের মুসলিম জনগোষ্ঠী ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। হাসপাতালগুলোতে তিন-চারজন রোগী একটি বিছানায় শুয়ে থাকে, অনেকেই ফ্লোরে চিকিৎসাহীন পড়ে আছে। রমজান মাসেও সাধারণ ইফতার বা তারাবির আয়োজন বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও মুসলিম বিশ্বজুড়ে অনেক দাতব্য সংস্থা ও মানবিক সংগঠন যেমন Islamic Relief, Muslim World League ইত্যাদি খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। মালয়েশিয়া, তুরস্ক, কুয়েতসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ সুদানের সংকটকে “মানবিক বিপর্যয়” আখ্যা দিয়েছে এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
এই যুদ্ধ শুধু সুদানের মুসলিমদের নয়, বরং গোটা ইসলামী বিশ্বের জন্য এক গভীর মানবিক পরীক্ষা। সুদানের মুসলিমরা এখন ধর্মীয়, সামাজিক ও মানসিকভাবে এক অস্থির অবস্থায় রয়েছে। তাদের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি হলো নিরাপত্তা, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও আন্তর্জাতিক সহায়তা। বিশ্বের মুসলিম সমাজের উচিত এই সংকটকে শুধুমাত্র সংবাদ হিসেবে নয়, বরং ভাইবোনদের প্রতি দায়িত্ব হিসেবে দেখা—প্রার্থনা, দান ও কূটনৈতিক চাপের মাধ্যমে যেন সুদানে স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়।

