বাংলাদেশ একটি ছোট এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এই দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন—এই সব খাতে অগ্রগতির জন্য সুদৃঢ় রাজনৈতিক কাঠামো ও নেতৃত্ব অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিনই একটি নতুন রাজনৈতিক দলের জন্ম হচ্ছে। বিষয়টি স্বাভাবিক নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গণতন্ত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের সহাবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্য হয় কেবল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা, তখন তা গণতন্ত্রের জন্য নয়, বরং দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, অনেক নতুন দল গঠিত হচ্ছে যাদের নেই কোনো সুসংগঠিত কাঠামো, নেই জনগণের জন্য বাস্তবধর্মী কর্মপরিকল্পনা বা আদর্শিক দিকনির্দেশনা। এসব দলের মূল লক্ষ্য ক্ষমতার অংশীদার হওয়া কিংবা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করা। এর ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে, রাজনীতির প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে এবং রাজনীতিতে একটি অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সরাসরি প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতি, উন্নয়ন প্রকল্প, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান খাতে। যখন জাতি বিভক্ত হয়ে যায় অসংখ্য ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দল ও মতাদর্শে, তখন জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে রাষ্ট্র কাঠামোর উপর একটি দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি হয়। তাই প্রয়োজন একটি সুসংহত ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক পরিবেশ—যেখানে গঠনমূলক মতবিনিময় থাকবে, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় দল গঠনের প্রতিযোগিতা থাকবে না।
দেশে যদি শক্তিশালী, দক্ষ এবং আদর্শিক নেতৃত্বসম্পন্ন কয়েকটি প্রধান রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠে, তবে তা জনগণের প্রকৃত চাহিদা ও স্বার্থের সঠিক প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হবে। যদি এই অব্যবস্থা চলতেই থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আরও গভীর রাজনৈতিক সংকটে পড়বে, যা জাতীয় অগ্রগতিকে থমকে দিতে পারে। তাই এখনই সময়—দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে শুদ্ধ করার, এবং রাজনীতিকে জনগণের কল্যাণে উৎসর্গ করার।