যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যা বিশ্বব্যাপী ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি, যেখানে প্রধানত তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যার মধ্যে গত বছর তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলার। অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন উচ্চ শুল্কের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক নীতির আওতায় শুধু বাংলাদেশ নয়, আরও অনেক দেশের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ওপর ২৯ শতাংশ, চীনের ওপর ৩৪ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের ওপর ৩২ শতাংশ, জাপানের ওপর ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের ওপর ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ওপর ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের ওপর ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের ওপর ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের ওপর ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ১৭ শতাংশ, চিলির ওপর ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার ওপর ১০ শতাংশ, তুরস্কের ওপর ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
অন্যান্য দেশের মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যের ওপর ৪৪ শতাংশ, লাওসের ওপর ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়।’ বুধবার (বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা) ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর থাকবে।’ এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন শুল্ক নীতির ফলে বাংলাদেশকে বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে এবং রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক হার হ্রাসের চেষ্টা করাও জরুরি।