মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেককে নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পণ করেছেন। একজন মানুষ যখন নিজের দায়িত্ব পালন করে, তখন তা তার জীবনকে আলোকিত করে তোলে। ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে জীবনযাপন, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনই কর্তব্যপরায়ণতার মূল ভিত্তি। ইসলামেও এই দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণতার গুরুত্ব অত্যন্ত গভীরভাবে বর্ণিত হয়েছে।
ইসলামে, কর্তব্যপরায়ণতার মধ্যে রয়েছে একে অপরের প্রতি সৎ আচরণ ও সহযোগিতা, এবং এ কাজের মাধ্যমেই একজন মুসলমান নিজের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেন। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে।” (সুরা আল-আলিমরান, ৩:১০৪)।
কর্তব্যপরায়ণতার পরিধি ব্যাপক, যার মধ্যে ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের পালন অন্তর্ভুক্ত। একে অপরকে সাহায্য করা, মানুষের কল্যাণে কাজ করা, ধর্মীয় বিধি-বিধান পালন করা—এই সবই কর্তব্যপরায়ণতার অংশ। হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, “কর্মের ফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।” (সহিহ বোখারি)।
বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, কর্মজীবী, সহকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সমাজের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি দায়িত্ব পালনের কথা ইসলামে বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্বব্যবহার করবে।” (সুরা আল-আনকাবুত, ২৯:৮)।
এছাড়াও, শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য মালিকপক্ষের কর্তব্য রয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “শ্রমিককে তার ঘাম শুকানোর আগে পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।” (সহিহ বোখারি)। এই সবই সমাজে সাম্য, সহমর্মিতা এবং সৌহার্দ্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কর্তব্যের ক্ষেত্রে অবহেলা এবং অমনোযোগিতা বিপদের কারণ হতে পারে। পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে যদি কেউ তার কর্তব্য পালন না করে, তবে তার ফলাফল বিপর্যয়কর হতে পারে। হাদিসে বলা হয়েছে, “তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমাদের সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।” (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)।
অতএব, একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ এবং উন্নত সমাজ গঠন করতে হলে, আমাদের প্রত্যেককে কর্তব্যপরায়ণ এবং দায়িত্বশীল হতে হবে। সততা, ন্যায়নিষ্ঠা এবং কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে আমরা জাতি ও সমাজের উন্নতি সাধন করতে পারব।