আজ ২৫শে বৈশাখ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী। বাংলা ১২৬৮ সালের এই দিনেই কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্ম নেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরুষ। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক এবং গান—সবক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন চিরস্থায়ী ছাপ, যা বাংলা সংস্কৃতিকে পৌঁছে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
রবীন্দ্রনাথের পিতা ছিলেন বিশিষ্ট ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা সারদাসুন্দরী দেবী। মাত্র আট বছর বয়সেই তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার নির্দেশে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী এবং ওড়িশার জমিদারি দেখভালের জন্য যাত্রা শুরু করেন, আর কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কাটান জীবনের বহু সময়। পরে ১৯০১ সালে পরিবারসহ চলে আসেন শান্তিনিকেতনে, যা হয়ে ওঠে তাঁর চেতনার কেন্দ্রস্থল।
তাঁর জীবদ্দশা ও মৃত্যুর পর মিলিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধসহ নানা রচনাবলি। আজ তাঁর জন্মদিনে নানা আয়োজনে স্মরণ করা হচ্ছে এই সাহিত্যপ্রতিভাকে।
চলতি বছর রবীন্দ্র জন্মোৎসবের প্রধান আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। সেই সঙ্গে নওগাঁর পতিসর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগেও নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি পালিত হচ্ছে। এবারের থিম নির্ধারণ করা হয়েছে—‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সড়কদ্বীপে তাঁর ছবি, কবিতা এবং শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে তিনদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ও চিত্রশিল্প প্রদর্শনী। এছাড়া বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শাখায় আয়োজিত হচ্ছে আলোচনা সভা।
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যজগৎ বৈচিত্র্যে ভরপুর। তাঁর সৃষ্টি চরিত্র চারুলতায় যেমন নিঃসঙ্গতার ছায়া, বিনোদিনীতে দেখা যায় আত্মসচেতনতায় উজ্জ্বল এক নারী, আর ‘গোরা’ উপন্যাসে উঠে এসেছে স্বদেশপ্রেমে জর্জরিত এক পুরুষের আত্মসংঘাত। বাংলা মাটি হোক বা বিশ্বমঞ্চ, সর্বত্রই তিনি সমান শ্রদ্ধেয়। সাহিত্যে তাঁর অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯১৩ সালে তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর জন্মদিনকে ঘিরে আজ দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নানা সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল আয়োজন।